Saturday, October 09, 2010

তুমি প্রিয় কবিতার ছোট্ট উপমা...

রেডিও গুনগুন চলছিল। এখন প্রায় সময়ই কোন না কোন রেডিও ছেড়ে রাখি। হঠাৎ আইয়ুব বাচ্চুর এই গানটা ছাড়লো। আমার খুব প্রিয় একটা গান। গানটা অনেক কথা মনে করিয়ে দিল। মনে পরে গেল প্রথমবার গানটা শোনার সময়কার কথা। প্রথমবার গানটা শুনেছিলাম এক বড় ভাইয়ের মুখে। ক্লাস নাইনে পড়ি তখন। আমাদের কলেজে তখন (এখনও হয়তো) প্রতি বছর প্রত্যেকটা আবাসিক হলের হাউস ফাংশান আয়োজন করতে হতো। বিশাল উৎসবের ব্যাপার ছিল সেটা। মাসব্যাপী পরিকল্পনা চলতো। প্রতিটা হাউস চেষ্টা করতো গুনে মানে অন্য সব হাউসকে ছাড়িয়ে যেতে। খুব উপভোগ্য ছিল সেই প্রতিযোগিতা। সেই অনুষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে আবার হাউসগুলোর র‍্যাংক করা হতো। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন আমি ছিলাম নজরুল ইসলাম হাউসের ছাত্র। আমাদের হাউস মাস্টার তখন ছিলেন আমিনুল ইসলাম স্যার। হাউস ফাংশানের উপস্থাপক হিসেবে কেন যেন তিনি আমাকে পছন্দ করেছিলেন। আমার সাথে অবশ্য একজন দ্বাদশ শ্রেণীর ভাইয়াও ছিলেন উপস্থাপক হিসেবে।সেই অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করতে গিয়ে পুরো অনুষ্ঠানের সাথেই জড়িয়ে গিয়েছিলাম। আমি অনাবাসিক ছিলাম। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমি বেশ কয়েকদিন হাউসে কাটিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানের প্রতিটি খুটিনাটি মুখস্ত হয়েগিয়েছিল মহড়া দিতে দিতে। অনেক মজা হতো। প্রথম প্রথম বেশ নার্ভাস লাগতো। তারপর আস্তে আস্তে ভরসা পেলাম, মনে হতে লাগ্লো উৎরে যাব। সেই অনুষ্ঠানের মহড়া করতে গিয়ে প্রথম এই গানটা শুনি অলিন ভাইএর মুখে। প্রথমবার শুনেই মুগ্ধ হয়েছিলাম। অলিন ভাইএর গানের গলা খুব ভাল ছিল। সেজন্যই বোধহয় উনি গানটার ব্যাপারে বেশ কনফিডেন্ট ছিলেন। মহড়াতে মনে হয় কেবল একবারই তাকে গাইতে শুনেছি আমি। মূল অনুষ্ঠানে গানটা শোনার জন্য তাই মনে মনে অপেক্ষা করছিলাম। তখন মাত্র নাইনে পড়ি। দ্বাদশ শ্রেণীর ভাইদের কি যে বড় মনে হতো। এখন ভাব্লে হাসি পায়। তখন তদের দেখে মনে হতো কতো কিছু তারা পারে, কত দ্বায়িত্ব তারা কতো সহজ ভাবে নেয়! আমার সাথে যেই ভাইয়াটা উপস্থাপনা করেছিলেন তার নামটা ভুলে গেছি। অলিন ভাইকে মনে থাকার কারণ আছে। কলেজের অন্যতম স্মার্ট ভাইয়া ছিলেন তিনি। আর মূল অনুষ্ঠানের দিন একটা ঘটনা তাকে আরও ভুলতে দেয়নি। আমার তখনও কোন ব্লেজার ছিল না। সাধারণতো কলেজের ছাত্ররাই ব্লেজার বানাতো তখন। আমি অনুষ্ঠানের দিন গিয়ে দেখি আমার সহ উপস্থাপক ব্লেজার পরে আছেন। তাকে দেখে আমার নিজেকে বেমানান মনে হতে লাগ্লো। হীন্মন্যতায় ভোগা শুরু হল। একটা সময় গিয়ে মনও বেশ খারাপ হয়ে গেল। আশা করছিলাম উপস্থাপনার সময়টা হয়তো কোন বড়ভাই তার ব্লেজার খুলে আমাকে দিবেন। কিন্তু কাউকে দেখছিলাম না নিজে থেকে কিছু বলতে। এই সময় অলিন ভাই নিজেই এসে আমাকে তার ব্লেজারটা দিয়েছিলেন।সাইজে আমার একটু বড় হয়েছিল। কিন্তু তাতে কি, ব্লেজার পরে আছি এই সুখে মহা আনন্দে উপস্থাপনা করেছিলাম। আমাদের পুরো অনুষ্ঠান একদম পরিকল্পনামাফিক হয়েছিল। এবং আমরা সেবার চ্যাম্পিয়ান হাউস হয়েছিলাম। কি যে আনন্দ আর গর্ব হয়েছিল সেদিন!