Sunday, March 07, 2010

ভোরের ঘ্রাণ

জানালায় দাঁড়িয়ে আছি। ঠাণ্ডা একটা আরামদায়ক বাতাস হচ্ছে। শরীর জুড়ানো বাতাস। কান পাতলে বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। পুরো ঢাকা শহর ঘুমিয়ে পড়েছে। দূরে জাপান গার্ডেন সিটির বিল্ডিং এর ঘুমন্ত সারি। রাত বাজে তিনটা। বাতাসটা ভালো লাগছে খুব গায়ে মুখে মাখতে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। অনেকদিন ভোরে উঠিনা। এই বাতাসটা আমাকে ভোরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। বাতাসে একটা ভোর ভোর ঘ্রাণ পাচ্ছি। মনে হচ্ছে কি আর একটু পরেই ভোর হয়ে যাবে। ভোরের কথা মনে হতেই অনেক আগের কিছু ভোরবেলার স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। একসময় আব্বা খুব সকালে হাঁটতে বের হতেন। সংসদ ভবন পুরোটা চক্কর দিয়ে ফিরতেন। স্কুল ছুটি থাকলে কোন কোন ভোরবেলা আমি, আমার ভাই-বোনও সঙ্গী হতাম। আব্বার সাথে তখন পাল্লা দিয়ে হাঁটতে পারতাম না। শুধু পেছনে পড়ে যেতাম। তাই একটু পরপর দৌড়ে নিতে হতো। কত রকম মানুষ দেখতাম। পত্রিকার হকারদের দেখতাম সাইকেল চেপে ছুটতে। মাঠা বলে এক অদ্ভুত বস্তু বিক্রি করতো কিছু মানুষ। কিছু মানুষ কত অদ্ভুত রকম ব্যায়াম করতো আপন খেয়ালে। কোন কোন জায়গায় দেখতাম দলবেঁধে ব্যায়াম করার দৃশ্য। একজন সামনে থেকে নির্দেশনা দিত আর পেছনে লোকজন তাকে অনুকরণ করতো। সংসদ ভবনের খুব কাছেই থাকতাম তখন আমরা। বাসা থেকে বেরিয়ে আধ মাইল হাঁটলেই ঢুকে পড়তাম সংসদ ভবন এলাকায়। সেখানে মূল রাস্তাটা ধরে হাঁটতাম। কখনও বামে ঢুকে জিয়ার কবরের ওদিক দিয়েও ঘুরে আসতাম। এরপর যুদ্ধ বিমানটা যেখানে রাখা সেখানে গিয়ে ডানে মোড় নিয়ে হাঁটতাম। তারপর আরেকটা ডানে বাঁক নিয়ে লাল ইটের একটা টানেলের মত জায়গায় বলে যেতাম। সেখানে থেকে সামনে হেঁটে যেতে থাকলে একসময় চলে আসতো আসাদ গেইট। ওখানে ভোর বেলাতে পত্রিকার পাহাড় জমতো। হকাররা জড়ো হতো একসাথে। টাটকা ছাপা হওয়া পত্রিকা একসাথে দেখতে যে কী ভীষণ ভালো লাগতো। আসাদ গেইটের মোড়ে একটা পত্রিকার স্ট্যান্ডে সেবা প্রকাশনীর বই রাখতো। আব্বার কাছে প্রায় দিনই আবদার করতাম একটা গোয়েন্দা রাজু বা তিন গোয়েন্দার জন্য। কখনও কখনও আবদার রাখা হতো। বইগুলোকে গায়ের সাথে লেপ্টে বাসায় ফিরতাম। সেদিন সেদিন আর পা ব্যথা বলে রিকশা করে ফেরার বায়না ধরতাম না। বইগুলো পড়বো বাসায় ফিরে এই ভাবতে ভাবতে পথ কেটে যেত।
কয়েকটা কুকুর ডাকছে কাছে কোথাও। কুকুরের ডাকটা শুনেও কেন জানি মনে হচ্ছে ভোরের কথা। একটু পরেই হয়তো ঘুমাতে যাব। ভোরে হতো ঘুম ভাঙবে না আর। ভোরের জন্য তাহলে অপেক্ষা করতে হচ্ছে...

2 comments:

শিশিরবিন্দু said...
This comment has been removed by the author.
শিশিরবিন্দু said...

ছোটবেলায় আমিও আব্বার সাথে ভোরে হাঁটতে বেরুতাম!আমিও পেছনে পড়ে যেতাম শুধু, আবার দৌড়ে ধরে ফেলতাম। আব্বা যখন ব্যায়াম করতে শুরু করত, আমি আপন মনে ঘুরে ঘুরে বেড়াতাম চারপাশে, আর মানুষগুলোকে দেখতাম।

অনেক মায়া মায়া হয়েছে লেখাটা। চোখের সামনে যেন দেখতে পাচ্ছি পিচ্চি ভানুসিংহ এদিক সেদিক না তাকিয়ে একটা গোয়েন্দা বই বুকে চেপে হাঁটছে। অনেক মায়া। সবকটা ছবি আমি দেখে ফেলেছিইইইই....!!